রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
এস এম সুমন খেলা ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৪ অপরাহ্ন
শেয়ার

বিশ্লেষণ

বিসিবি নির্বাচন ও আগামীর ক্রিকেট


BCB ofc
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি যা ঘটেছে, তা হয়তো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও হবে না। ভারত ছাড়া বিশ্বের কোন ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনে এমন সব ঘটনার নজির নেই। নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেট বোর্ডে তারাই আসবেন যারা ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট, যেমন- হয় সংগঠক, যারা ক্রিকেট নিয়ে নিয়ে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কাজ করেন। এছাড়া, সাবেক ক্রিকেটাররাও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন কিছুু কিছু বিবেচনায়। ২০০৫ সাল থেকে বিসিবির প্রতিটা নির্বাচনই কাভার করেছি একজন সংবাদকর্মী হিসেবে। প্রতিটি বিসিবি নির্বাচনেই সূক্ষ্ম পরিকল্পনা করা হয় পছন্দের প্রার্থীদের জয়ী করানোর জন্য।

বিগত সরকারের আমল থেকেই বিসিবি পরিচালনা পরিষদের নির্বাচন ঘিরে নীল নকশা শুরু হয়েছিলো। নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ডে ক্ষমতাধর পরিচালক ছিলেন ইসমাইল হায়দার মল্লিক। তার এতটাই ক্ষমতা ছিলো যে কখনো কখনো বিসিবি’র সাবেক সভাপতির চেয়েও কাউন্সিলররা, এমনকি অনেক পরিচালকও মল্লিক সাহেবকে ভয় পেতেন। ২০১৩, ২০১৭ ও ২০২১ এই তিনটি নির্বাচনেই ইসমাইল হায়দার মল্লিকের নীল নকশায় পছন্দের প্রার্থীরা ভোটে জিতে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। বিসিবি’র নির্বাচনে ক্লাব ক্যাটাগরি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখানে মোট ৭৬টি ভোট থাকে। তাই ক্লাব ক্যাটাগরিতে নির্বাচনে যারা প্রার্থী হন তাদের খরচও করতে হয় বেশি। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের ক্লাবগুলোর কদরও থাকে অনেক। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে একজন কাউন্সিলরশিপ পান। আর এই কাউন্সিলরদের ভোটেই নির্বাচিত হন পরিচালক। এমনও অনেক নজির আছে কোন কোন প্রার্থী প্রায় কোটি টাকা খরচ করেন বিসিবি’র পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে। এত টাকা খরচ করে হলেও বিসিবি পরিচালক হতেই হবে। কারণ, একজন বিসিবি পরিচালক কখনো কখনো সম্মান পান একজন ‘মন্ত্রী’র চেয়েও বেশি। সাথে পরিচালক হিসেবে হরহামেশা বিদেশ ভ্রমণের সুযোগতো আছেই।

তাই ক্রীড়া সংগঠক না হয়েও বিসিবির পরিচালক হতে পারলে সব দিক থেকেই লাভ। ব্যবসায়িক সুবিধাও পেয়ে থাকেন অনেক পরিচালক। সদ্য শেষ হওয়া বিসিবির নির্বাচনে যে ২৫ জন পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন, এদের বেশিরভাগই প্রকৃতপক্ষে ক্রীড়া সংগঠক নয়। গুটি কয়েক ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট নিয়ে কাজ করলেও, বেশিরভাগেরই সংগঠক হিসেবে অভিজ্ঞতার ঝুলি ফাঁকা। সরকারের উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপে অনেকে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। বছরের পর বছর ক্লাব ক্রিকেট নিয়ে প্রকৃত সংগঠকরা আড়াল হয়ে গেছেন এই নোংরামির দৌঁড়ে। মোটা অংকের টাকা খরচ করে এবার যারা বিসিবি পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন তারা ক্রিকেট বোর্ডে এসে দেশের ক্রিকেটে কী অবদান রাখবেন তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ইতিমধ্যেই বিসিবির নির্বাচনকে একপেশে ও অস্বচ্ছ বলে আখ্যা দিয়েছে প্রায় ৪৮টি ক্লাব। তারা দেশের ক্রিকেট বর্জনের হুমকিও দিয়েছে। বর্জনকারীদের এই তালিকায় আছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালও। এই বর্জনের ঘোষণা যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে ক্ষতির মুখে পড়বে খেলোয়াড়রাই। কারণ বেশিরভাগ খেলোয়াড়ের জীবিকার বড় অংশ আসে ক্লাব ক্রিকেট খেলে। তাই ক্লাবগুলো যদি লিগ বর্জন করে তাহলে এসব ক্রিকেটারদের বড় অংশ বেকার থাকবেন আগামী মৌসুমে। যদিও বিসিবির নবনির্বাচিত সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করবেন।

এখানেই বিসিবিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। জেলা ও বিভাগ থেকে যারা পরিচালক নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তাদের অনেকেই ক্ষমতার বলয় থেকে এসেছেন। জেলা কিংবা বিভাগে যেসব প্রকৃত সংগঠক ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করেছেন এতদিন, এবারের নির্বাচনে তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। জেলাগুলোতে নিয়মিত লিগ আয়োজন হয়না এমনিতেই। তার ওপরে হাইব্রিড পরিচালকরা দেশের ক্রিকেটের জন্য তৃণমূল থেকে আগামী দিনের জন্য কত খেলোয়াড় বের করে আনতে পারবেন? এসব হাইব্রিড পরিচালকদের সাথে তৃনমূলে কাজ করা সংগঠকের মধ্যে দূরত্বের কারণেই নিয়মিত লিগ কিংবা খেলা আয়োজন নিয়ে সংশয় থাকবে বেশ। ভেতরে ভেতরে একটা দ্বন্দ্বও থাকবে। তাই আগামীতে দেশের সামগ্রিক ক্রিকেট কতোটা এগিয়ে যাবে সেটা নিয়েও আছে শংকা। নব নির্বাচিত পুরিচালকদের সাথে ক্রিকেট বর্জনকারীদের একটা দূরত্ব তো আছেই। সেই দ্বন্দ্বে দেশের ক্রিকেটে সূর্যের আলো বাধা ছাড়া আসতে পারে কিনা সেটার দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞ আমিনুল ইসলাম বুলবুল নিপুণ দক্ষতায় দেশের ক্রিকেটকে আরো সাফল্যমন্ডিত করবেন এমন প্রত্যাশাই থাকবে সবার।

এস এম সুমন: সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক।