শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক দেশজুড়ে ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৫৯ অপরাহ্ন
শেয়ার

ছেলেকে একনজর দেখতে বাড়ির উঠানে অপেক্ষায় প্রবাসী বাবা


tanvir

ছবি: সংহগৃহীত

আধা পাকা বাড়ির উঠানজুড়ে মানুষের ভিড়। কেউ চুপচাপ দাঁড়িয়ে, কেউ আবার চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। ঘরের ভেতর থেকে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। উঠানের এক কোণে নিঃশব্দে বসে আছেন আব্দুল বারেক—ওমানপ্রবাসী এই বাবা রাতের ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন, শুধু ছেলেকে একবার শেষবারের মতো দেখতে।

তাঁর চোখ লাল, মুখে ক্লান্তি আর ব্যথার ছাপ। মাঝেমধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে কারও কাছ থেকে খবর নিচ্ছেন—“ছেলের লাশ এখন কোথায়?” তারপর আবার বসে পড়ছেন। অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছেন রাস্তার দিকে, যেদিক দিয়ে আসবে তাঁর ছেলের নিথর দেহ।

মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সমবয়সী কিশোরদের মারধরে নিহত হয় স্কুলছাত্র তানভীর। খবর পেয়ে সেদিনই ওমান থেকে ছুটে আসেন তাঁর বাবা আব্দুল বারেক। আজ বুধবার দুপুরে পৌরসভার মুন্সিপাড়ার বাড়িতে এসে শুনলেন, ছেলের লাশ এখনো মর্গে। সন্ধ্যার পর লাশ বাড়িতে আনা হবে, তারপর জানাজা শেষে দাফন।

অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি বলেন, “ওমান থেকে টিকিট কাটি তাড়াহুড়ো করে। ভাবিনি কখনো এভাবে ফিরব। আমার ছেলেটা তো ভালোই ছিল, কারো সঙ্গে ঝামেলা করত না। এখন আর কিছুই বুঝতে পারছি না—সব শেষ হয়ে গেল।”

তানভীরের পরিবার জানায়, ১৫ অক্টোবর ক্লাসে সহপাঠীদের মধ্যে মারামারির সময় তানভীর থামানোর চেষ্টা করেছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মঙ্গলবার টিফিনের সময় একদল কিশোর তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।

ঘটনাস্থল থেকে বাড়ির দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। স্থানীয় ফার্মেসির মালিক কেশব শীল বলেন, “প্রথমে স্কুলের সামনে ঝগড়া হয়, পরে রেললাইনের পাশে আবার ধাক্কাধাক্কি। শেষে আমার দোকানের সামনে ১৫–২০ জন ছেলেপেলে মিলে তানভীরকে মারতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে।”

ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই তানভীরের মা রেহেনা আকতার অচেতন হয়ে পড়েছেন। কখনো সামান্য জ্ঞান ফিরে বুক চাপড়ে কাঁদছেন, আবার সংজ্ঞাহীন হয়ে যাচ্ছেন। ঘরের ভেতর তাঁর আর্তনাদে শোকের ছায়া আরও ঘন হচ্ছে উঠানে।

হাটহাজারী থানার ওসি মনজুর কাদের ভূঁইয়া জানিয়েছেন, স্কুলের দুই পক্ষের আগের বিরোধ থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত। ঘটনায় জড়িত তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এর আগেও হাটহাজারীতে এ ধরনের সহিংসতা ঘটেছে। চলতি মাসেই আরও দুই তরুণকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। তবুও সহিংসতা থামছে না।

তানভীরের গ্রামের বাড়ির উঠানজুড়ে এখন শোকের নীরবতা। শুধু এক প্রবাসী বাবা রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছেন—শেষবারের মতো ছেলেকে একনজর দেখতে।