বরেণ্য চিত্রশিল্পী মতলুব আলী। ছবি: সংগৃহীত
বরেণ্য চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, শিল্পসমালোচক ও গণসংগীতকার অধ্যাপক মতলুব আলী (বাবলু) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার (৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
শিল্পীর স্ত্রী ও গীটারশিল্পী রেহানা মতলুব (রেখা) তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে মতলুব আলীকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল, পথে তিনি মারা যান।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার প্রভাত বেলায় রচিত ‘লাঞ্ছিত নিপীড়িত জনতার জয়’ গানের রচয়িতা ছিলেন অধ্যাপক মতলুব আলী। মুক্তিযুদ্ধকালীন চারুকলা আন্দোলনের অন্যতম সহযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে দেশের চারুকলা অঙ্গন ও সংস্কৃতি জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
১৯৪৬ সালে রংপুরের মুন্সীপাড়ায় (মাদরাসা রোড) জন্মগ্রহণ করেন মতলুব আলী। রংপুর জিলা স্কুল থেকে ১৯৬৩ সালে মাধ্যমিক ও কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে একই বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং চারুকলা অনুষদের ডিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
মতলুব আলীর চিত্রকর্মে স্বাধীনতা, মানবতা ও সমাজবাস্তবতার প্রতিচ্ছবি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তাঁর বিখ্যাত কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে— তেলরঙে আঁকা ‘রাজারবাগ একাত্তরে’, কালি ও কলমে আঁকা ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বীরাঙ্গনা বোনে’, জলরঙে আঁকা ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যাবর্তনে’, ‘মানব সন্তানে’, এবং ‘দুই বালকে’। তাঁর ক্যানভাসে বিমূর্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম ও উদার মানবতাবাদ— যা তাকে বাংলাদেশের চারুকলার ইতিহাসে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
