
পৃথিবীর অন্যতম মহাবিপন্ন প্রজাতি বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ
‘বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ’। একসময় বাংলাদেশের সুন্দরবনে প্রচুর পরিমাণে দেখা গেলেও, বর্তমানে এই প্রজাতিটি পৃথিবীর অন্যতম `মহাবিপন্ন প্রজাতির’ তালিকায় রয়েছে। এই প্রজাতিটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে একটি বিশেষ উদ্যোগ নেয় সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র। এখানকার কর্মকর্তারা জানান, পৃথিবীতে যখন বাটাগুর বাসকা প্রজাতিটি বিপন্ন হয়ে পড়ে, তখন তারা এই প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেন।
২০১৪ সালে শুরু হয় এই এই কচ্ছপের প্রজনন প্রচেষ্টা। স্থানীয় জমিদার বাড়ি থেকে দুটি কচ্ছপ খুঁজে বের করে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে শুরু হয় কার্যক্রম। এরপর থেকে সফলভাবে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে প্রায় ‘৫ শতাধিক বাচ্চা’ উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
মহাবিপন্ন এই প্রজাতির কচ্ছপগুলো যাতে বিলুপ্ত না হয়ে যায়, সে জন্য করমজল কেন্দ্রে থাকা কচ্ছপগুলোকে স্থানীয় বনের পুকুরে ছাড়া হয় এবং কিছুটা বড় হওয়ার পরে কিছু বাচ্চাকে ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করা হয়।
কেন্দ্রটির এক কর্মকর্তা জানান, ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত মোট ১৩৪টি কচ্ছপ পুকুরে ছাড়া হয়েছে এবং এর মধ্য থেকে কিছু কচ্ছপকে সুন্দরবনের খাল ও নদীতেও অবমুক্ত করা হয়েছে। এদের সবকটিই সুস্থ ও ভালো রয়েছে বলে জানান তারা। সময়মতো এই কচ্ছপগুলো প্রজনন শুরু করবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
এছাড়াও গেল ৪ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৪ দিনব্যাপী বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ নিয়ে একটি বিশেষ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশের বন বিভাগ। এই কার্যক্রমে বাংলাদেশের বন বিভাগের বিশেষজ্ঞ টিম, সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনার মৎস্য বিশেষজ্ঞ দল, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং অস্ট্রিয়ার জু ভিয়েনা-এর গবেষকগণ এই কার্যক্রমে অংশ নেন। এসময় সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পুকুরে থাকা কচ্ছপগুলো তুলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
সুন্দরবনের করমজল কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রের এই সফল কার্যক্রমের ফলে বাটাগুর বাসকা কচ্ছপের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বাংলাদেশের `জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য একটি বড় সাফল্য’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং বিলুপ্তপ্রায় এই প্রজাতিটির টিকে থাকার আশা জাগাচ্ছে।




























