
ছবি: সংগৃহীত
বিদেশে গিয়ে ভাগ্য বদলানোর স্বপ্ন ছিল চোখে। সেই স্বপ্ন পূরণে নিজেদের শেষ সম্বল জমি, গবাদিপশু বিক্রি এবং চড়া সুদে ঋণ করে দালালের হাতে তুলে দিয়েছিলেন সাড়ে ৩২ লাখ টাকা। কথা ছিল কুয়েতের অয়েল কোম্পানিতে মিলবে লোভনীয় চাকরি। কিন্তু সব স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। দালাল চক্রের দেওয়া ‘জাল ভিসা’র ফাঁদে পড়ে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার লাইমপাশা গ্রামের পাঁচ দিনমজুর পরিবার এখন সর্বস্বান্ত।
প্রতারণার শিকার এই পাঁচ ভুক্তভোগী হলেন—শরীফ মিয়া (৪৩), মোশাররফ হোসেন (৪৪), বাবলু মিয়া (৪০), লুসা মিয়া (৩৫) ও সানাউল করিম (৩১)। নিঃস্ব এই পরিবারগুলোতে এখন দুবেলা খাবার জোটানোই দায় হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুরের দালাল হেলাল উদ্দিন সাধি তাঁদের কুয়েতের একটি অয়েল কোম্পানিতে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখান। তাঁর কথায় বিশ্বাস করে গত ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জ শহরের শোলাকিয়ায় হেলালের ভাড়া বাসায় নগদ টাকা বুঝিয়ে দেন তাঁরা। সব মিলিয়ে পাঁচজন ভুক্তভোগী দালাল হেলালের হাতে তুলে দেন সাড়ে ৩২ লাখ টাকা।
বিশ্বাস অর্জনের জন্য দালাল হেলাল অত্যন্ত কৌশলী পথ বেছে নেন। তিনি কিশোরগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) ভুক্তভোগীদের তিন দিনের প্রশিক্ষণ করান এবং জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গার প্রিন্ট) নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সরকারি দপ্তরে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় ভুক্তভোগীরা সরল বিশ্বাসে ধরে নিয়েছিলেন যে তাঁদের ভিসা ও কাজ বৈধ। কিন্তু টাকা দেওয়ার কিছুদিন পর তাঁরা জানতে পারেন, তাঁদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া ভিসাগুলো ভুয়া। কুয়েতের কোনো কোম্পানিতে তাঁদের চাকরি হয়নি।
প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চাইলে শুরু হয় টালবাহানা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টাকা ফেরত দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টো তাঁদের মারধর, মামলা ও ডিবি পুলিশের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
বর্তমানে অভিযুক্ত দালাল হেলাল উদ্দিন সাধি পলাতক রয়েছেন। তাঁর ব্যবহৃত নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর ছেলে রিয়ানের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ‘রং নম্বর’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সব হারিয়ে দিশেহারা ভুক্তভোগীরা এখন চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন। ভুক্তভোগী শরীফ মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে ভিসা নিয়েছিলাম। এখন ঘরে খাবারও নাই। পরিবার না খেয়ে দিন কাটায়। টাকা না পেলে আমাদের মরণ ছাড়া কোনো পথ নাই।”
আরেক ভুক্তভোগী বাবলু মিয়া বলেন, “আমাদের সরকারি ট্রেনিং করানো হলো, ফিঙ্গার নেওয়া হলো, আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি যে এসব ভুয়া। এখন আমাদের সব শেষ।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান বলেন, “এই পাঁচটি পরিবার সত্যিই বড় অসহায় হয়ে পড়েছে। দালাল চক্র তাঁদের একেবারে পথে বসিয়ে দিয়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত এর ব্যবস্থা নেওয়া।”
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ও জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, ভিসা সঠিক কি না, তা যাচাই করা তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কেউ যদি প্রশিক্ষণের সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করে, তবে আগে থেকে তা বোঝার উপায় তাঁদের থাকে না।
এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যেন প্রতারক হেলালকে আইনের আওতায় এনে তাঁদের খোয়া যাওয়া টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।






























