শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
মাহমুদ নেওয়াজ জয় ফিচার ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৫:৩২ অপরাহ্ন
শেয়ার

এক দেয়ালের পতনে যেভাবে বদলে গেল পৃথিবী


Berlin wall cover

এক ঢেউ যা সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী ব্লককে নড়বড়ে করে দেয় এবং এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার সূচনা ঘটায়

বিশ্ব রাজনীতি কখনোই থেমে থাকে না, কিন্তু ১৯৮৯ সালের মতো পরিবর্তনের গতি ও শক্তি খুব কম সময়েই দেখা গেছে।
বছরটির চূড়ান্ত মুহূর্তে ঘটে যায় আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত দৃশ্যগুলোর একটি—বার্লিন দেয়ালের পতন।

দেয়ালটি ভাঙা পড়েছিল আংশিকভাবে এক প্রশাসনিক ভুলের কারণে, কিন্তু আসলে এটি ছিল এক বিপ্লবী ঢেউয়ের প্রতীক—এক ঢেউ যা সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী ব্লককে নড়বড়ে করে দেয় এবং এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার সূচনা ঘটায়।

দেয়ালটা কীভাবে ভাঙল?
১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর, পূর্ব বার্লিনে পাঁচ লাখ মানুষ যখন গণবিক্ষোভে রাস্তায় নেমেছে, তার মাত্র পাঁচ দিন পরেই ধসে পড়ে বার্লিন দেয়াল—যা বিভাজিত করে রেখেছিল কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানিকে ও পুঁজিবাদী পশ্চিম জার্মানিকে।

পূর্ব জার্মান নেতারা ক্রমবর্ধমান জনরোষ ঠান্ডা করতে সীমান্তে কিছুটা শিথিলতা আনার চেষ্টা করেছিল—তাদের উদ্দেশ্য ছিল নাগরিকদের ভ্রমণ কিছুটা সহজ করা, সীমান্ত পুরোপুরি খুলে দেওয়া নয়।

এই পরিবর্তনগুলো ছিল মূলত ছোটখাটো প্রশাসনিক পদক্ষেপ। কিন্তু ভুল হাতে পড়ে সেই ছোট্ট পরিবর্তনই তৈরি করে ইতিহাস।

নতুন নিয়ম সংক্রান্ত নোটটি হাতে পান সরকারের মুখপাত্র গ্যুন্টার শাবোভস্কি। দুর্ভাগ্যবশত, তিনি সংবাদ সম্মেলনের আগে সেটি পড়ার সুযোগই পাননি। তাই সরাসরি ক্যামেরার সামনে বসেই যখন তিনি নোটটি প্রথমবার উচ্চস্বরে পড়তে শুরু করেন, সাংবাদিকরা স্তব্ধ হয়ে যান।

“দেশের বাইরে ব্যক্তিগত ভ্রমণের জন্য এখন থেকে কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই আবেদন করা যাবে,”— ঘোষণা করেন শাবোভস্কি।

বিস্মিত সাংবাদিকরা আরও বিস্তারিত জানতে চান। নোট ঘেঁটে শাবোভস্কি জানান, যতদূর তিনি জানেন, নিয়মটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর।

কিন্তু আসলে পরিবর্তনগুলো কার্যকর হওয়ার কথা ছিল পরদিন সকাল থেকে, নির্দিষ্ট ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করে। ততক্ষণে টেলিভিশনে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। এবং অল্প সময়ের মধ্যেই হাজার হাজার পূর্ব জার্মান নাগরিক সীমান্তের দিকে ছুটে আসে।

Berlin wall inner 2

সেই রাতে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে ছিলেন হারাল্ড ইয়েগার। তিনি পরে ডের স্পিগেল-এ সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি টিভিতে শাবোভস্কির সংবাদ সম্মেলন দেখে বিভ্রান্ত হয়েছিলাম—এরপর দেখি সীমান্তে মানুষের ঢল।”

উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি বারবার যোগাযোগ করলেও কেউ কোনো নির্দেশ দেননি—না সীমান্ত খুলতে, না গুলি চালাতে। শত শত নাগরিকের সামনে হাতে গোনা কয়েকজন প্রহরীর কিছুই করার ছিল না।

“গুলিবর্ষণ ছাড়াই অনেকে আহত বা নিহত হতে পারত—ধাক্কাধাক্কি বা ভিড়ের আতঙ্কে। তাই আমি আমার লোকদের আদেশ দিলাম: বাধা সরাও, দরজা খোলো!”- বলেন স্পিগেল।

এবং তারপর যা ঘটল, তা ইতিহাস।
হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে যায়, কেউ কাঁদছে, কেউ উল্লাস করছে। বার্লিনের ব্র্যান্ডেনবার্গ গেট-এর ওপরে উঠে অনেকে হাতুড়ি আর বাটালি দিয়ে দেয়াল ভাঙতে শুরু করে। বিশ্বজুড়ে টেলিভিশন পর্দায় ভেসে ওঠে সেই ছবিগুলো—এক বছরের ঝড়ো আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে সেই রাতে।

কেন ভেঙে পড়ল দেয়ালটি?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপকে ভাগ করে নেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। ধীরে ধীরে সোভিয়েতরা গড়ে তোলে তথাকথিত “আয়রন কার্টেন”, যা পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপকে আলাদা করে দেয়।

পরাজিত জার্মানিকে ভাগ করা হয় চার অংশে—আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে।
সোভিয়েত অংশ হয়ে ওঠে পূর্ব জার্মানি, যা আনুষ্ঠানিকভাবে “জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (জিডিআর)” নামে পরিচিত ছিল—সোভিয়েত প্রভাববলয়ের পশ্চিম সীমান্ত।

কিন্তু রাজধানী বার্লিনকেও ভাগ করা হয় চার অংশে। পশ্চিম অংশে ছিল পশ্চিমা শক্তিগুলোর নিয়ন্ত্রণ, আর পূর্ব অংশে সোভিয়েতদের। ফলে পশ্চিম বার্লিন কার্যত হয়ে পড়ে এক দ্বীপ—চারদিক থেকে ঘেরা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র দ্বারা।

১৯৬১ সালে দেয়ালটি নির্মিত হয়, কারণ হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন পূর্ব থেকে পশ্চিমে পালিয়ে যাচ্ছিল—ভালো সুযোগ ও স্বাধীনতার খোঁজে।

Berlin wall inner 3

এক অর্থনৈতিক ও মানসিক পতন
১৯৮০-এর দশকে এসে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। খাদ্যাভাব, প্রযুক্তিগত পশ্চাদপদতা, ও প্রশাসনিক দুর্নীতিতে রাষ্ট্র নড়বড়ে হয়ে যায়।
তার ওপর ১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনা ছিল এক প্রতীকী ধাক্কা—যা সাম্যবাদী ব্যবস্থার দুর্বলতা উন্মোচন করে দেয়।

সেই সময়ে ক্ষমতায় ছিলেন তুলনামূলক তরুণ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ। তিনি চালু করেন দুটি নতুন নীতি—
“গ্লাসনস্ত” (অর্থাৎ উন্মুক্ততা) এবং “পেরেস্ত্রইকা” (অর্থাৎ পুনর্গঠন)।
কিন্তু পরিবর্তনের ঢেউ এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে, গর্বাচেভ নিজেও তার গতি অনুমান করতে পারেননি।

বিপ্লবের ঢেউ
পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশে তখন থেকেই সংস্কার ও গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল।
পোল্যান্ডে বছরের পর বছর শ্রমিক আন্দোলনের পর সরকার “সলিডারনোশ্চ” (Solidarity) নামের নিষিদ্ধ ট্রেড ইউনিয়নটিকে বৈধ ঘোষণা করে।
১৯৮৯ সালের গ্রীষ্মে আংশিক মুক্ত নির্বাচনে অংশ নিয়ে সলিডারনোশ্চ বিপুল বিজয় অর্জন করে। যদিও কমিউনিস্টদের জন্য কিছু আসন সংরক্ষিত ছিল, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্ভব হয়নি, তবুও জনগণ স্পষ্ট বার্তা দেয়—সময় বদলাচ্ছে।

এদিকে হাঙ্গেরিতে মার্চ মাসেই গণতন্ত্রের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। মে মাসে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমান্তের ২৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁটাতার অপসারণ করা হয়—আয়রন কার্টেনের প্রথম ফাটল।

আগস্টে, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া ও লিথুয়ানিয়া—সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত তিনটি প্রজাতন্ত্র—মিলে গড়ে তোলে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে হৃদয়গ্রাহী প্রতিবাদের একটি।
“সিংগিং রেভলিউশন”-এর অংশ হিসেবে প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ হাতে হাত ধরে ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ মানবশৃঙ্খল গঠন করে স্বাধীনতার দাবিতে।

অগাস্টের উষ্ণ দিনে হাঙ্গেরি পশ্চিমের দিকে তার সীমান্ত পুরোপুরি খুলে দেয়, ফলে পূর্ব জার্মান নাগরিকদের জন্য এটি হয়ে ওঠে মুক্তির পথ।

এদিকে চেকোস্লোভাকিয়া, যেখানে ১৯৬৮ সালের সংস্কার আন্দোলন সোভিয়েত সেনারা দমন করেছিল, সেখানেও একইভাবে মানুষ পশ্চিমে পালানোর পথ খুঁজে পায়। শত শত মানুষ পশ্চিম জার্মান দূতাবাসে আশ্রয় নেয়, এবং শেষ পর্যন্ত তাদের ট্রেনে করে পশ্চিমে পাঠানো হয়।

পূর্ব জার্মানি এরপর বাধ্য হয় চেকোস্লোভাকিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করতে, কিন্তু তখন আর দেরি হয়ে গেছে—বিপ্লবের আগুন ছড়িয়ে গেছে ঘরে ঘরে।

পূর্ব জার্মানির বিদ্রোহ
লেইপজিগ শহর থেকে শুরু হয় গণবিক্ষোভ।
৯ অক্টোবর ১৯৮৯, যখন পূর্ব জার্মানি তার প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী পালন করছে, তখনই ৭০,০০০ মানুষ রাস্তায় নামে।

পশ্চিম জার্মানি থেকে মুক্ত নির্বাচনের আহ্বান আসে, আর নতুন নেতা এগন ক্রেনৎস সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু দেয়ালের পতন আসন্ন, তা কেউ জানত না।

অক্টোবরের শেষদিকে হাঙ্গেরি সংসদ একাধিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন ও সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আইন পাস করে—একদম গণতান্ত্রিক পথে।
একই সময়ে, পূর্ব জার্মানিতে প্রতিবাদের ঢল নামতে থাকে—৩১ অক্টোবর নাগাদ সংখ্যাটা অর্ধলক্ষ ছাড়িয়ে যায়।

ক্রেনৎস মস্কো যান, এবং পরে বিবিসিকে জানান যে, তখন পর্যন্ত তাঁকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল—“জার্মান একীকরণ কোনো আলোচনার বিষয় নয়।”

৪ নভেম্বর, মাত্র এক মাসের মধ্যে পূর্ব বার্লিনের আলেকজান্ডারপ্লাৎস-এ অর্ধ মিলিয়ন মানুষ স্বাধীনতার দাবিতে জড়ো হয়।
তিন দিন পর সরকার পদত্যাগ করে। কিন্তু নতুন নেতা ক্রেনৎস এখনো ক্ষমতায়, কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হিসেবেই।
পাঁচ দিন পরেই আসে সেই ঐতিহাসিক দিন—গ্যুন্টার শাবোভস্কির সংবাদ সম্মেলন—যা পরিবর্তন করে দেয় পৃথিবীর মানচিত্র।

Berlin wall inner 4

সোভিয়েত কেন বলপ্রয়োগ করল না?
১৯৮৯-এর শুরুতেই চীনের তিয়ানআনমেন স্কয়ারে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ নির্মমভাবে দমন করেছিল বেইজিং সরকার।
তাহলে সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন তা করল না, যদিও অতীতে তারা বিদ্রোহ দমন করতে সেনাবাহিনী ব্যবহার করেছে?

সোভিয়েত ভূখণ্ডেই তারা জর্জিয়ায় ২১ জন স্বাধীনতাপন্থীকে হত্যা করেছিল। কিন্তু পূর্ব ইউরোপের বাকি অংশে গর্বাচেভ সিদ্ধান্ত নেন—সেনা পাঠানো হবে না।

তার কূটনৈতিক মুখপাত্র গেনাদি গেরাসিমভ মজার ছলে বলেছিলেন, “আমরা এখন ‘ফ্র্যাঙ্ক সিনাত্রা নীতি’ অনুসরণ করছি—যে দেশ যেমন চায়, তেমন পথ বেছে নেবে। সিনাত্রা যেমন গেয়েছিলেন—I Did It My Way!”

এই সিদ্ধান্তই বদলে দেয় ইতিহাসের গতিপথ।

ইউরোপের নতুন অধ্যায়
৩ ডিসেম্বর ১৯৮৯, মাল্টায় মুখোমুখি বসেন গর্বাচেভ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশ। যৌথভাবে তারা ঘোষণা দেন—ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান ঘটছে।

তবু ১৯৮৯-এর বিপ্লবের ঢেউ তখনো শেষ হয়নি।

চেকোস্লোভাকিয়ায় ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভেলভেট রেভলিউশন, যা রক্তপাত ছাড়াই কমিউনিস্ট শাসনের পতন ঘটায়।
অন্যদিকে রোমানিয়ায় আন্দোলন হয়ে ওঠে সহিংস—স্বৈরশাসক নিকোলাই চাউসেস্কু ও তার স্ত্রী এলেনা পালানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু ধরা পড়ে যান।
২৫ ডিসেম্বর, বড়দিনের দিনই, তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়।

এই বিপ্লবে ১,০০০-রও বেশি মানুষ নিহত হয়—যা পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক রক্তক্ষয়ী ছিল।

১৯৮৯-এর উপসংহার
এরপর কী ঘটল সোভিয়েত ইউনিয়নে?
১৯৯০ সালে লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্তোনিয়া তাদের নতুন রাজনৈতিক স্বাধীনতা কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্ট সরকারকে বিদায় জানায় এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার পথে এগোয়।

সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন কার্যত ভেঙে পড়ছে, কিন্তু গর্বাচেভ শেষ চেষ্টা করেন—১৫টি প্রজাতন্ত্রের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে রাষ্ট্রটিকে সংস্কারের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখার।

কিন্তু রক্ষণশীল কমিউনিস্টরা বিদ্রোহ করেন। ১৯৯১ সালের আগস্টে গর্বাচেভ যখন ছুটিতে ক্রিমিয়ায়, তখন তাঁকে গৃহবন্দি করে এক অভ্যুত্থান চালানো হয়।

তিন দিনের মধ্যেই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়—রুশ প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের নেতৃত্বে গণতন্ত্রপন্থীরা রাস্তায় নেমে আসে।
কিন্তু এটিই ছিল সোভিয়েত সাম্রাজ্যের মৃত্যুঘণ্টা।

এক এক করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে প্রজাতন্ত্রগুলো। এবং ১৯৯১ সালের শেষ রাতে, ক্রেমলিনের উপর থেকে শেষবারের মতো নামানো হয় সোভিয়েতের পতাকা।