
ফাইল হচবি
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে চাইলেও সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারত—এমন বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আদালত সম্প্রতি হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে। তবে রায় কার্যকর করতে হলে তাঁকে দেশে ফেরত আনতে হবে, আর সেই সিদ্ধান্ত এখন পুরোপুরি ভারতের হাতে।
সিএনএন লিখেছে, একসময় ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক যাত্রা ছিল নাটকীয় উত্থান ও পতনে ভরা। ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে পরিবার হারানোর পর তাঁকে নির্বাসনে যেতে হয়। সেই দুঃসময়ে ভারতের আশ্রয় তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জীবনের ভিত্তি তৈরি করে। পরে দেশে ফিরে তিনি জনপ্রিয় নেতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পান এবং দীর্ঘ সময় ক্ষমতাও ধরে রাখেন।
তবে ২০০৮ সালের পর দমননীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং একদলীয় শাসনের অভিযোগ ক্রমেই জোরালো হতে থাকে। সমালোচকদের মতে, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সংকুচিত গণতন্ত্রের দিকে এগোচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থী আন্দোলনের বিস্ফোরণ এবং সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে সহিংসতা চরমে পৌঁছায়। জাতিসংঘের হিসাবে, দমন-পীড়নে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকায় জনরোষের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন হাসিনা এবং পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন।
এখন বাংলাদেশের দাবি, ভারতে অবস্থান করা হাসিনাকে দ্রুত ফেরত পাঠাতে হবে যাতে তাঁর বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যায়। রায় ঘোষণার পরদিনই বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিতে চিঠি দিয়ে হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া ভারতের “দায়িত্ব”।
তবে ভারত এ বিষয়ে এখনো সতর্ক ও নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। ভারতের সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়েত বলেন, “ভারত তাঁকে ফিরিয়ে দেবে বলে আমি মনে করি না।” হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদও জানিয়েছেন, “ভারত সব সময় ভালো বন্ধু—তারা আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হাসিনার ফিরে যাওয়া কিংবা ফেরত পাঠানো—দুটোই দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে এই ইস্যুটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা বাড়াতে পারে। আওয়ামী লীগ এখন নিষিদ্ধ, নেতৃত্বশূন্য; অন্যদিকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গভীর রাজনৈতিক বিভাজন সামলাতে ব্যস্ত।
সিএনএনের ভাষায়, হাসিনার পতন কি বাংলাদেশের “বিষাক্ত রাজনৈতিক যুগের” সমাপ্তি, নাকি অনিশ্চয়তার নতুন অধ্যায়ের শুরু—এখন সেটিই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
সূত্র: সিএনএন































