শনিবার । ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
বিনোদন ডেস্ক বিনোদন ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ৬:৪৪ অপরাহ্ন
শেয়ার

সালমান শাহ তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, দাবি সামিরার


salman-shah-samira

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুরহস্য ঘিরে প্রায় তিন দশক ধরে চলছে বিতর্ক। কেউ বলেন ‘আত্মহত্যা’, কেউ বলেন ‘হত্যা’। তবে সালমানের পরিবার দাবি করে আসছে এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে তাকে। এ অভিযোগে সালমানের মা নীলা চৌধুরী আইনের আশ্রয় নেন এবং মামলায় তাঁর পুত্রবধূ সামিরাকে এক নম্বর আসামি করেন।

সালমানের মৃত্যুর পর সামিরা খুব কমই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন। বরং তিনি বেশিরভাগ সময় নিজেকে আড়ালেই রেখেছেন। তবে অমর এই নায়কের জন্মদিন উপলক্ষে বছর দুই আগে তিনি এক সাক্ষাৎকারে মুখ খুলেছিলেন, জানিয়েছিলেন কিছু অজানা কথা।

সালমান শাহর জন্মদিনে কীভাবে উদ্‌যাপন হতো জানতে চাইলে সামিরা বলেন, “ইমন (সালমানের ডাক নাম) নিজের চেয়ে অন্যের সুখ নিয়েই ভাবত। নিজের জন্মদিনে তেমন কোনো আয়োজন করত না, বরং আমার জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিতে ভালোবাসত। একবার চোখ বেঁধে ১১ তলা থেকে নিচে নামানো হয় আমাকে, চোখ খুলে দেখি লাল রঙের গাড়ি—ওই গাড়িটিই ইমন উপহার দিয়েছিল আমাকে।”

সংসার জীবন নিয়ে সামিরা বলেন, “আমরা দুজন একে অপরকে ভীষণ ভালোবাসতাম। মনোমালিন্য হলেও ইমন ভালোবাসা দিয়ে তা পূরণ করত।” তবে সালমানের মা নীলা চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তিনি জানান, “বিয়ের আগে তিনি আমাকে খুব পছন্দ করতেন। বিয়ের পর যখন জানতে পারেন আমাদের বিয়েতে আমার পরিবারের মত ছিল না—তারপর থেকেই দূরত্ব তৈরি হয়।”

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনাটি স্মরণ করে সামিরা বলেন, “সেদিন সামান্য কথাকাটাকাটি হয়। ইমন রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর দরজা ভেঙে দেখা যায় সে ঝুলে আছে। এর আগেও তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল সে।”

তিনি আরও বলেন, “মেট্রোপলিটন হাসপাতালের রেকর্ড চেক করলে সেটা জানা যাবে। সেখানে দুবারের রেকর্ড আছে। আরেক হাসপাতালে আছে তৃতীয় রেকর্ড। তিনটাই আমাদের বিয়ের আগের ঘটনা। তিনটা ঘটনাই আমি জানি। একবার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে করেছিল। আরেকবার আমাকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য করেছে। আরেকবার অন্য একটি ঘটনায় সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল।”

সেদিনের ঘটনার পর সামিরা জানান, “আত্মহত্যার পর ইমনকে ওর পরিবারের লোকজন দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসক ওকে মৃত ঘোষণা করলে ইমনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দরে, সেখান থেকে সিলেটে। ওর শেষ মুখটাও আমাকে দেখতে দেওয়া হয়নি।”

আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ প্রসঙ্গে সামিরা বলেন, “এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এসব কথা রটিয়েছেন সালমানের মা। আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে আমি ঠিকমতো চিনতামই না।”

তিনি আরও জানান, “ইমনের বাবা প্রথমে রমনা থানায় ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা করেন। পরে ইমনের মা বিষয়টিকে হত্যা বলে দাবি করেন।”

সম্প্রতি, আদালত মামলাটি নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক নীলা চৌধুরীর আবেদনের পর এই আদেশ দেন। সালমানের পরিবারের দাবি, পিবিআইয়ের আগের তদন্ত ছিল পক্ষপাতমূলক এবং অসম্পূর্ণ।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর পর থেকে পুলিশ, সিআইডি, র‌্যাব ও পিবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত চালালেও রহস্যের সমাধান হয়নি। প্রায় তিন দশক পরও প্রশ্ন রয়ে গেছে—এটি কি আত্মহত্যা, নাকি হত্যা?