
সালমান শাহকে নিয়ে লেখা বইটি সে সময় ব্যাপক আলোচনায় আসে। ছবি: সংগৃহীত
বাংলা চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহ—যার মৃত্যু আজও রহস্যে ঘেরা। ঠিক এই রহস্যকে কেন্দ্র করেই ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত এক বই দেশে সৃষ্টি করেছিল তীব্র আলোড়ন ও বিতর্ক। বইটির নাম ‘সালমান শাহ, নক্ষত্রের আত্মহত্যা’, লেখক সাংবাদিক রবি আরমান।
বইটি প্রকাশের পরই চলচ্চিত্র অঙ্গন ও পাঠকসমাজে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক আলোচনা। কারণ, সেখানে সালমান শাহর মৃত্যু ‘আত্মহত্যা’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল—যা তার পরিবার বিশেষ করে মা নীলা চৌধুরী মেনে নিতে পারেননি।
নীলা চৌধুরী অভিযোগ করেন, বইটিতে প্রকাশিত তথ্য মিথ্যা ও মানহানিকর। পরে তিনি লেখক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলা গ্রহণ করে বইটির বিক্রি ও বিতরণ নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশের পর বইটি বাজার থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই এটি দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে এবং পাঠক মহলে ‘নিষিদ্ধ দলিল’ নামে পরিচিতি পায়।
একজন নব্বইয়ের দশকের বিনোদন সাংবাদিক বলেন, “বইটিতে ‘আত্মহত্যা’ শব্দ ব্যবহারের কারণেই সালমান শাহর মা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। তাই আদালতের দ্বারস্থ হন এবং বইটি জব্দের নির্দেশ আসে।”
তর্কিত এই বইটির প্রচ্ছদের পেছনে লেখা ছিল এক আবেগঘন ভূমিকা— “আমাদের সিনেমার বাগানে একটি ফুল ফুটেছিল—সুবাসিত ও উজ্জ্বল। নাম তার সালমান শাহ। চন্দ্রালোকে ভেসে যাওয়া সেই সফল ও উচ্ছল যুবকের দেহে বিঁধেছিল গোপন এক বিষকাঁটা। অন্তর্লীন যাতনায় নীল হয়ে এক শুভ্রসকালে হঠাৎ সে আত্মদংশনে হারিয়ে যায়। তারপর সেই বাগানে পাখিরা আর গান গায় না, ফুল ফোটে না, বাতাসে ভাসে বিষাদের একটানা করুণ সুর।”
এর পরের অংশে লেখা ছিল— “দুর্ভেদ্য রহস্যের পর্দা সরিয়ে সালমানচরিতের সেই গোপনগাঁথা উঠে এসেছে এক অন্তরঙ্গজনের সাহসী কলমে। ঢাকার সিনেমা বলয়ের এক উজ্জ্বল সময় ও সেই সময়ের মহানায়ক সালমান শাহকে ঘিরে এটি এক বিরল দলিল।”
প্রকাশের ২৮ বছর পরও এই বইটি নিয়ে আগ্রহ কমেনি পাঠক ও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মধ্যে। আজও কেউ কেউ পুরোনো বইয়ের দোকান বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এর একটি কপি খোঁজেন, যদিও তা পাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব।
সালমান শাহর মৃত্যুর রহস্য যেমন আজও অমীমাংসিত, তেমনি তার জীবনের এই বইটি রয়ে গেছে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক নিষিদ্ধ অধ্যায় হিসেবে।



























